গরমের হাত থেকে মুক্তি পেতে অভিনব উপায় আবিষ্কার করলেন হালিশহরের এক বৃদ্ধ। বিস্তারিত জেনে নিন।

বাংলা নববর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গব্যাপী তীব্র গরম পড়েছিল। গরমের কারণে সমগ্র রাজ্যের মানুষ রীতিমত নাজেহাল হয়ে পড়েছিল, এমনকি অতিরিক্ত গরম এবং তাপপ্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই রাজ্যের স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। আর এই গরম থেকে বাঁচার জন্য হু হু করে চাহিদা বাড়তে শুরু করেছিল এসি এবং কুলারের। তবে অতিরিক্ত গরমে ইলেকট্রিসিটির চাহিদাও ক্রমাগত হারে বাড়ছিল, যার কারণে রাজ্যজুড়ে লোডশেডিংও বৃদ্ধি পেয়েছিল। আর তাতেই তীব্র গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সাধারণ মানুষ নানা ধরনের বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। যদিও নিজের বাড়িকে ঠান্ডা রাখার জন্য গৃহীত বিভিন্ন প্রকার পদ্ধতিগুলির মধ্যে হালিশহরের ৮০ বছরের এক বৃদ্ধের তরফে গৃহীত বিশেষ একটি পদ্ধতি সমগ্র রাজ্যের নাগরিকদের চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা এই বৃদ্ধ নিজের বাড়িতে ন্যাচারাল কুলিং প্রসেস তৈরি করে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের মূল আকর্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আর এই ন্যাচারাল কুলিং প্রসেসের মূলে রয়েছে এক বিশেষ প্রকারের গাছ। হালিশহরের এই বৃদ্ধ নিজের বাড়ির ছাদে কালো আঙুর চাষ করেছেন, আর এই আঙ্গুর গাছের মাধ্যমেই গরমের দাবদাহ থেকে নিজের বাড়িকে রক্ষা করা সম্ভব বলে দাবি জানিয়েছেন তিনি। তবে এক্ষেত্রে বাড়িতে আঙ্গুর গাছ লাগানোর মাধ্যমে সমগ্র বাড়ির পরিবেশকে ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি অত্যন্ত গরমে আঙ্গুলের মত সুস্বাদু ফল খাওয়ার সুবিধাও মিলেছে।

বিভিন্ন সূত্রের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হালিশহরের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী অরুণ কুমার একসময় রেলের কর্মচারী ছিলেন। দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের আদ্রা ডিভিশনে ক্যারেজ বিভাগে কর্মরত থাকাকালীন তিনি তার কোয়াটারে কালো আঙ্গুরের গাছ লাগিয়েছিলেন। আর গরমের সময় এই গাছই তার কোয়াটারকে ঠান্ডা রাখত বলেই দাবি জানিয়েছেন তিনি। বিগত ২০০০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। তবে অবসর গ্রহণ করলেও গাছ লাগানোর পুরনো স্বভাবকে কোনোভাবেই ছাড়তে পারেননি। আর তাতেই নিজের বাড়িকে গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ এবং তাপপ্রবাহের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বাড়ির ছাদে কালো আঙ্গুরের গাছ চাষ করেছেন। এই কালো আঙ্গুরের গাছগুলি বর্তমানে তার বাড়ির ছাতার মত কাজ করছে এবং গ্রীষ্মের মরশুমে গরমও তাপপ্রবাহ থেকে সম্পূর্ণ বাড়ির পরিবেশকে ঠান্ডা রাখছে।

আরও পড়ুন:- দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের সুবিধার্থে নতুন নোট আনতে চলেছে RBI, বিস্তারিত জেনে নিন।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, বৈশাখ মাস শুরু হওয়ার পর থেকেই সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে যখন তাপমাত্রা ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল তখন অরুণ বাবুর বাড়িতে কোনরকম এসি কিংবা কুলার ছাড়াই তাপমাত্রা যথেষ্ট কম ছিল। আর এর মূলে রয়েছে বাড়ির ছাদে লাগানো আঙ্গুর গাছগুলি। যেহেতু আঙ্গুর গাছ লতাজাতীয় গেছে, তাই এই গাছগুলি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাড়ির সম্পূর্ণ ছাদকে ঢেকে ফেলে এবং সূর্যের প্রখর তাপকে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে দেয় না। যার জেরে গ্রীষ্মের মরশুমেও কোনোরকম এসি কিংবা কুলার ছাড়াই অরুণ বাবুর বাড়ির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে।

তবে এখানেই শেষ নয়, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মারফত জানা গিয়েছে যে, অরুণ বাবুর বাড়ির গাছগুলি থেকে ৪০ থেকে ৫০ কেজি আঙ্গুর পাওয়া যায়। অর্থাৎ গ্রীষ্মের মরশুমে বাড়িতে ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি যথেষ্ট আঙ্গুরের জোগান দিচ্ছে অরুণবাবুর এই কালো আঙ্গুরের গাছগুলি। তবে এই আঙ্গুরগুলিকে শুধুমাত্র ফল হিসেবে খাওয়া হয় না, এগুলি থেকে আঙ্গুরের সিরাপও তৈরি করা হয়ে থাকে। অরুণ বাবুর কেরামতিতে তার প্রতিবেশী সহ সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ, এমনকি সারা দেশের মানুষ রীতিমতো মুগ্ধ। বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং গ্রীন হাউস ইফেক্ট থেকে বিশ্বকে মুক্তি দিতে গাছের জুড়ি মেলা ভার, এই সত্যকে আরো একবার সকলের সামনে তুলে ধরলেন হালিশহরের অরুণ বাবু।