পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে অনগ্রসর শ্রেণীর সাধারণ জনগণের জন্য নানা ধরনের প্রকল্প, যোজনা, স্কিম থেকে শুরু করে স্কলারশিপ কার্যকর করা হয়েছে। আর এবারে ২০২৩ সালের শুরুতেই এই সমস্ত জনদরদী প্রকল্পের তালিকায় আরো একটি একটি স্কলারশিপের নাম যুক্ত করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই নতুন স্কলারশিপটি মেধাশ্রী স্কলারশিপ বা মেধাশ্রী প্রকল্প নামে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। আর তাতেই আজকের এই পোস্টে আমরা রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী মেধাশ্রী স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করতে চলেছি।
মেধাশ্রী স্কলারশিপ কি?
ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে পঞ্চম শ্রেণী থেকে শুরু করে অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত পড়ুয়াদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য প্রি ম্যাট্রিক স্কলারশিপ প্রদান করা হতো। তবে ২০২২ সালের একেবারে শেষের দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই স্কলারশিপটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর তাতেই রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে মেধাশ্রী স্কলারশিপ বা মেধাশ্রী প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছিল। তবে বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্যে জানা গিয়েছে যে, ওবিসি সম্প্রদায় ভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য এবং স্কুলছুটের প্রবণতা বন্ধ করার জন্যই এই মেধাশ্রী প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কার্যকরী এই জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের বহু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারবেন বলেই মনে করা হচ্ছে রাজ্যের কর্মকর্তাদের তরফে।
কারা মেধাশ্রী স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন?
১. পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ীভাবে বসবাসকারী কেবলমাত্র এই স্কলারশিপের সুবিধা পেতে চলেছেন।
২. মেধাশ্রী প্রকল্পের আওতায় অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে অবশ্যই ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীরাই কেবলমাত্র মেধাশ্রী স্কলারশিপের সুবিধা পাবেন।
৩. পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে স্বীকৃত যেকোনো বিদ্যালয়ের পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরাই এই স্কলারশিপের সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরাই এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের সুযোগ পাবেন।
৪. পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী ওবিসি সম্প্রদায় ভুক্ত যেসমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা পঞ্চম শ্রেণী থেকে শুরু করে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছেন তারাই কেবলমাত্র এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
৫. যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী অন্য কোনো স্কলারশিপ কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যকরী স্কলারশিপের আওতায় অনুদান পেয়ে থাকেন তারা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন না। এছাড়াও বেসরকারি স্কলারশিপের সুবিধাভোগী ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন না।
৬. আবেদনকারী শিক্ষার্থীর পরিবারের বাৎসরিক আয় ২.৫ লক্ষ টাকা বা তার তুলনায় কম হতে হবে।
৭. পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা পশ্চিমবঙ্গের বাইরের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন তারা মেধাশ্রী স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের সুবিধা পাবেন না।
৮. এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর জন্য আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রীর একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক।
৯. কোন ছাত্র বা ছাত্রী যদি বার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করে এবং একই কার ক্লাসে ২ বার পড়াশোনা করে, তবে তিনি এই স্কলারশিপের আওতায় ২ বার অনুদান পাবেন না।
আরও পড়ুন:- স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের হাসপাতালের তালিকা চেক করবেন কিভাবে, জেনে নিন এখনই।
অনুদান:-
রাজ্য সরকারের তরফে জারি করার তথ্য অনুসারে, রাজ্যের ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীরা মেধাশ্রী স্কলারশিপের আওতায় প্রতি বছরে ৮০০ টাকার অনুদান পেয়ে যাবেন।
মেধাশ্রী স্কলারশিপের আওতায় কিভাবে নিজের নাম নথিভুক্ত করা সম্ভব?
মেধাশ্রী প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র কিংবা ছাত্রীকে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের তরফে উল্লেখিত নথি সহকারে নির্দিষ্ট দিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হলেই উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের তরফে মেধাশ্রী স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হবে।
এছাড়াও রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীরা দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পের মাধ্যমেও মেধাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে মেধাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার বাড়ির নিকটবর্তী দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প থেকে মেধাশ্রী স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি সংগ্রহ করতে হবে। এরপর ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করে ফর্মে উল্লেখিত সমস্ত নথি সহকারে পুনরায় দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে জমা দেওয়ার মাধ্যমেও এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানো সম্ভব।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিসমূহ:-
১. আবেদনকারী শিক্ষার্থী অথবা তার বাবা এবং মায়ের ওবিসি সার্টিফিকেট।
২. আবেদনকারী শিক্ষার্থীর বিগত পরীক্ষার মার্কশিট।
৩. স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণপত্র।
৪. আবেদনকারী শিক্ষার্থীর পরিবারের বাৎসরিক আয়ের প্রমাণপত্র।
৫. আবেদনকারী পড়ুয়ার আধার কার্ড।
৬. উক্ত ছাত্র বা ছাত্রীর পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
৭. আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সমস্ত নথি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই স্কলারশিপটি ইতিমধ্যে শিক্ষামহলের ব্যক্তিত্বদের কাছে যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়, রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রী এবং সাধারণ জনগণও এই মেধাশ্রী স্কলারশিপের সমূহ প্রশংসা করেছেন। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী ওবিসি সম্প্রদায় ভুক্ত বহু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী মেধাশ্রী স্কলারশিপের অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। আগামী দিনেও প্রচুর সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী এই মেধাশ্রী স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রসর হতে পারবেন, এমনটাই দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা।