আবেদন করুন সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপে এবং পেয়ে যান প্রতি বছরে সর্বোচ্চ ৩৮,৪০০ টাকা

ভারতের দুঃস্থ অথচ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার খাতিরে কার্যকর একটি উল্লেখযোগ্য বেসরকারি স্কলারশিপ হল সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপ। সীতারাম জিন্দাল ফাউন্ডেশন -এর তরফে কার্যকরী এই স্কলারশিপের অধীনে পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলির আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য পেয়ে থাকেন। মাধ্যমিক কিংবা দশম শ্রেণীতে যথাযথ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারেন।

সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা, আবেদনের প্রক্রিয়া, আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি থেকে শুরু করে কবে থেকে সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করা যাবে আজ সমস্ত প্রকার তথ্য নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।

সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা কি কি:-

১. মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা বর্তমানে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়াশোনা করছেন তারা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। তবে শুধুমাত্র একাদশ কিংবা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা নয়, ITI, স্নাতক, স্নাতকোত্তর স্তরে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সের অধীনে পাঠরত শিক্ষার্থী এবং ইঞ্জিনিয়ারিং -এর মত প্রফেশনাল কোর্সগুলির আওতায় পাঠরত শিক্ষার্থীরাও সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
২. সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র কিংবা ছাত্রী পরিবারের বার্ষিক আয় ২.৫ লক্ষ টাকা কিংবা তার তুলনায় কম হতে হবে। তবে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীর পিতা কিংবা মা অথবা পরিবারের যেকোনো একজন সদস্য চাকুরীরত সেই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে পরিবারের বার্ষিক আয় ৪ লক্ষ টাকা বা তার তুলনায় কম হতে হবে।
৩. এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর বয়স ৩০ বছর কিংবা তার তুলনায় কম হতে হবে। ৩০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরা এই স্কলারশিপের অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন না।

আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক শিক্ষাগত যোগ্যতা:-

১. একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠারত ছাত্রদের ক্ষেত্রে বিগত পরীক্ষায় ৬৫ শতাংশ নম্বর পেলেই এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানো যাবে। অন্যদিকে, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়াশোনা করছেন এরূপ ছাত্রীদের ক্ষেত্রে বিগত পরীক্ষায় ৬০ শতাংশ নম্বর পেলেই সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানো যাবে।

২. ITI -এর আওতায় পড়াশোনা করছেন এইরূপ ছাত্রদের সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপের ক্ষেত্রে আবেদনের জন্য বিগত পরীক্ষায় ৪৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে এবং ছাত্রীদের ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।

৩. B.A, B.Com, B.Sc., BFA, BCA, BBA, BBM, -এর মত কোর্সগুলির অধীনে স্নাতক স্তরে পাঠরত ছাত্ররা উচ্চমাধ্যমিকে ৬৫ শতাংশ নম্বর পেলে এই স্কলারশিপের অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন। অন্যদিকে উপরোক্ত কোর্সের আওতায় পড়াশুনা করছেন এইরূপ ছাত্রীরা উচ্চ মাধ্যমিকের ৬০ শতাংশ নম্বর পেলেই সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপের অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন।

৪. মেডিসিন, ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের অধীনে পড়াশোনা করছেন এরূপ ছাত্ররা উচ্চমাধ্যমিকে ৬৫ শতাংশ নম্বর পেলেই এই স্কলারশিপের অনুদানের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। অন্যদিকে উপরোক্ত কোর্সের অধীনে পাঠরত ছাত্রীরা উচ্চ মাধ্যমিক ৬০ শতাংশ নম্বর পেলেই সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপের অধীনে আবেদন জানাতে পারবেন।

৫. যে সমস্ত ছাত্রীরা বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সের অধীনে পড়াশোনা করছেন তাদের সিতারাম জিন্দাল স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে বিগত পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে এবং ডিপ্লোমা কোর্সের আওতায় পড়াশোনা করছেন এরূপ ছাত্ররা নূন্যতম ৫৫ শতাংশ নম্বর পেলে এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।

৬. M.A., M.Phil, M.Com, M.Lib -এর মতো স্নাতকোত্তর স্তরের কোর্সগুলির অধীনে পাঠরত ছাত্ররা বিগত পরীক্ষায় ৫৫ শতাংশ নম্বর পেলেই এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। অন্যদিকে উপরোক্ত কোর্সগুলির অধীনে পড়াশোনা করছেন এরূপ ছাত্রীদের এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে বিগত পরীক্ষায় নূন্যতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।

আরও পড়ুন:- রাজ্য সরকারের রুপশ্রী প্রকল্পে আবেদন করুন এবং ২৫ হাজার টাকা অনুদান পান

অনুদান:-

১. একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্রীরা প্রত্যেক মাসে ৭০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ৮৪০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্ররা প্রত্যেক মাসে ৫০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ৬০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকে।

২. সরকারি ITI -এর আওতাধীন ছাত্রদের প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ৬০০০ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। অন্যদিকে বেসরকারি ITI -এর অধীনস্থ ছাত্রীদের প্রতি মাসে ৭০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রতি বছরে ৮৪০০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।

৩. স্নাতক স্তরে জেনারেল কোর্সের অধীনে যে সমস্ত ছাত্রীরা পড়াশোনা করছেন তাদের প্রতিমাসে ১৪০০ টাকা অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ১৬,৮০০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। আবার স্নাতক স্তরে জেনারেল কোর্সের আওতায় যে সমস্ত ছাত্ররা পড়াশোনা করছেন তাদের প্রত্যেক মাসে ১১০০ টাকা অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ১৩,২০০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। বিশেষভাবে সক্ষম ছাত্র-ছাত্রীদের এই স্কলারশিপের আওতায় প্রতি মাসে ১৪০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ১৬,৮০০ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়।

৪. যে সমস্ত ছাত্রীরা বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিসিন কোর্সের অধীনে পড়াশোনা করছেন তারা এই স্কলারশিপের আওতায় প্রত্যেক মাসে ২৩০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ২৭,৬০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন, অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিসিন কোর্সের আওতাধীন ছাত্ররা এই স্কলারশিপের আওতায় প্রত্যেক মাসে ২,০০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ২৪,০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। গ্রাজুয়েট ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের আওতাধীন ছাত্ররা এই স্কলারশিপের আওতায় প্রত্যেক মাসে ২৫০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রতিবছরে ৩০,০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে গ্রাজুয়েট ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের অধীনে যেসকল ছাত্রীরা পড়াশোনা করছেন তারা এই স্কলারশিপের আওতায় প্রত্যেক মাসে ৩০০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ৩৬,০০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। গ্রাজুয়েট মেডিসিন কোর্সের আওতাভুক্ত ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের অধীনে প্রতিমাসে ৩২০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ৩৮,৪০০ টাকার অনুদান পান। আবার গ্রাজুয়েট মেডিসিন কোর্সের আওতাভুক্ত ছাত্ররা এই স্কলারশিপের অধীনে প্রতি মাসে ২৮০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ৩৩,৬০০ টাকার অনুদান পান। এছাড়াও যে সমস্ত ছাত্রীরা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছেন তাদের অতিরিক্ত ১৮০০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। আবার হোস্টেলে থেকে উপরোক্ত কোর্সের আওতায় পাঠরত ছাত্রদের অতিরিক্ত ১২০০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।

৫. ডিপ্লোমা কোর্সের অধীনে পড়াশোনা করছেন এইরূপ ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় প্রতিমাসে ১২০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ১৪, ৪০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। আবার ডিপ্লোমা কোর্সের অধীনে পাঠরত ছাত্ররা এই স্কলারশিপ থেকে প্রতিমাসে ১,০০০ টাকা করে অর্থাৎ বছরে ১২,০০০ টাকার অনুদান পান।

৬. যে সকল ছাত্রীরা স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছেন তারা এই স্কলারশিপের অধীনে প্রতি মাসে ১৮০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ২১,৬০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। স্নাতকোত্তর স্তরে পাঠরত ছাত্রদের এই স্কলারশিপের অধীনে প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা করে অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ১৮,০০০ টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। যেসকল বিশেষভাবে সক্ষম ছাত্র-ছাত্রীরা স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছেন, তারা এই স্কলারশিপ থেকে প্রতিমাসে ১৮০০ টাকা করে, অর্থাৎ প্রত্যেক বছরে ২১,৬০০ টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন।

সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপের অধীনে আবেদন জানাবেন কিভাবে?

সীতারাম জিন্দাল স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর জন্য আপনাকে প্রথমেই সীতারাম জিন্দাল ফাউন্ডেশন -এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট https://www.sitaramjindalfoundation.org/ -এ যেতে হবে। এরপর হোমপেজে থাকা Apply for Scholarship অপশনে ক্লিক করতে হবে এবং আপনার সামনে যে নতুন পেজটি আসবে তার বাঁদিকে থাকা Download Application and Annexure অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি pdf রূপে ডাউনলোড করে নিতে হবে। এরপর ওই ফর্মটিকে প্রিন্ট করে সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথি অ্যাটাচ করে সীতারাম জিন্দাল ফাউন্ডেশন -এর ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে হবে।

আবেদনপত্র পাঠানোর ঠিকানা:-

Sitaram Jindal Foundation
Jindal Nagar, Tumkur Road, Bangalore – 560 073
ফোন নম্বর: +91-80-2371-7777 / 78 / 79 / 80

আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিপত্র:-

১. আবেদনকারীর উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিট।
২. আবেদনকারীর বিগত পরীক্ষার মার্কশীট।
৩. পরিবারের বাৎসরিক আয়ের সার্টিফিকেট।
৪. ফি পেমেন্টের সার্টিফিকেট।
৫. হোস্টেলে থেকে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছেন তাদের ক্ষেত্রে হোস্টেল ওয়ার্ডেনের সার্টিফিকেট।
৬. প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট।
৭. মেরিট সার্টিফিকেট।

Leave a Comment