পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সহায়তা করার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে যে সমস্ত স্কলারশিপ কার্যকর করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি স্কলারশিপ হল বিকাশ ভবন স্কলারশিপ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে কার্যকরী এই স্কলারশিপটি ইতিমধ্যেই ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বহুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আর তাতেই পশ্চিমবঙ্গব্যাপী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ায় আগামী দিনে কবে বিকাশ ভবন স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানো যাবে, কারা আবেদন জানাতে পারবেন, আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি কি কি, আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কারা বিকাশ ভবন স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন?
১. বিকাশ ভবন স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন। তবে শুধুমাত্র একাদশ কিংবা দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা নয়, স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি স্তরে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরাও এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন চালাতে পারবেন।
২. পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী পড়ুয়ারাই কেবলমাত্র এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
৩. বিকাশ ভবন স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে আরও জানানো হয়েছে যে, যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা রাজ্য সরকারের তরফে স্বীকৃত স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিজেদের শিক্ষা সম্পন্ন করছেন তারাই এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
৪. বিকাশ ভবন স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, যেসকল ছাত্রছাত্রীরা মাধ্যমিকে ৬০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং বর্তমানে সাইন্স, আর্টস অথবা কমার্স বিভাগের অধীনে একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন তারা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
৫. যেসমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চ মাধ্যমিকের ৬০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং বর্তমানে সাইন্স, আর্টস অথবা কমার্স বিভাগের অধীনে স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছেন তারা এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
৬. উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা ডি.এল.এড কোর্সের অধীনে পড়াশোনা করছেন তারাও এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন, তবে আবেদনের ক্ষেত্রে এই সকল ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যূনতম ৬০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।
৭. উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা পলিটেকনিক সহ অন্যান্য ডিপ্লোমা কোর্সের অধীনে পড়াশোনা করছেন তারাও এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে ৬০ শতাংশ নম্বর পেলেই এই সকল ছাত্র-ছাত্রীরা বিকাশ ভবন স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
৮. স্নাতক স্তরে ৫৩ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর যেসকল ছাত্র-ছাত্রীরা বর্তমানে সাইন্স, আর্টস অথবা কমার্স বিভাগের অধীনে স্নাতকোস্তর স্তরে পড়াশোনা করছেন তারাও স্কলারশিপের আওতায় আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
৯. উচ্চ মাধ্যমিকে ৬০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা বর্তমানে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং -এর মত প্রফেশনাল কোর্সগুলির আওতায় পড়াশোনা করছেন তারাও এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে যোগ্য বলেই বিবেচিত হবেন। অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ারিং -এর আওতায় পাঠরত যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা স্নাতক স্তরে ৫৫ শতাংশ উত্তীর্ণ হয়েছে এবং বর্তমানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন স্তরে পড়াশুনা করছেন তারাও এই স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন।
১০. কোন ছাত্র কিংবা ছাত্রী যদি অন্য কোন সরকারি এবং বেসরকারি স্কলারশিপের আওতায় অনুদানের টাকা পেয়ে থাকেন তারা বিকাশ স্কলারশিপের আওতায় কোনরূপ অনুদান পাবেন না।
১১. বিকাশ ভবন স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র অথবা ছাত্রীর পরিবারের বাৎসরিক আয় ২.৫ লক্ষ টাকা বা তার কম হওয়া আবশ্যক।
আরও পড়ুন:- সমব্যথী প্রকল্পে আবেদন করলে মিলবে ২০০০ টাকা অনুদান। কিভাবে আবেদন করবেন জেনে নিন।
অনুদানের পরিমাণ:-
বিকাশ ভবন স্কলারশিপের কর্তৃপক্ষের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে এই স্কলারশিপের আওতায় ১২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৯৬ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। তবে অনুদানের পরিমাণ সম্পূর্ণভাবে ছাত্র-ছাত্রীর কোর্সের ওপর নির্ভর করে।
১. একাদশ শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের আওতায় প্রত্যেক বছর ১২ হাজার টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন।
২. যে সকল ছাত্রছাত্রীরা আর্টস এবং কমার্স নিয়ে স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছেন তারা স্কলারশিপের আওতায় প্রত্যেক বছর ১২ হাজার টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। তবে সাইন্স বিভাগে যে সমস্ত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন তাদের বিকাশ ভবন স্কলারশিপের আওতায় ১৮ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।
৩. পলিটেকনিক সহ অন্যান্য ডিপ্লোমা কোর্সের আওতাধীন ছাত্র-ছাত্রীদের এই স্কলারশিপের আওতায় প্রত্যেক বছরে ১৮ হাজার টাকার অনুদান দেয়া হয়।
৪. D.El.Ed কোর্সের অধীনে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের এই স্কলারশিপের আওতায় প্রতি বছর ১২ হাজার টাকার অনুদান দেয়া হয়।
৫. মেডিকেল ডিগ্রি এবং ডিপ্লোমা কোর্সে যেসমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করছেন তারা এই স্কলারশিপের আওতায় প্রতিবছরে যথাক্রমে ৬০ হাজার টাকা এবং ১৮ হাজার টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন।
৬. স্নাতক স্তরে ইঞ্জিনিয়ারিং সহ AICTE অনুমোদিত অন্য কোন প্রফেশনাল কোর্সের আওতায় পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রত্যেক বছরে ৬০ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হয়। উপরোক্ত কোর্সগুলির অধীনে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা স্নাতকোত্ত স্তরে পড়াশোনা করছেন তাদের বিকাশ ভবন স্কলারশিপের আওতায় প্রত্যেক বছরে ৬০ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করা হয়।
৭. UGC -এর তরফে অনুমোদিত বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল কোর্সগুলির অধীনে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করছেন তারাও বিকাশ ভবন স্কলারশিপের আওতায় ১৮ হাজার টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন।
৮. যে সকল ছাত্র-ছাত্রী স্নাতকোত্তর স্তরে আর্টস ও কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন তারা প্রতিবছরে বিকাশ ভবন স্কলারশিপের আওতায় ২৪ হাজার টাকার অনুদান পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে সাইন্স বিভাগের অধীনে স্নাতকোত্তর স্তরে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রত্যেক বছর এই স্কলারশিপের আওতায় ৩০ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করা হয়ে থাকে।
৯. NON NET M.PHIL. অথবা NON NET PH.D. এর অধীনে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করছেন তারা এই স্কলারশিপের আওতায় ৬০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৯৬ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান পেয়ে থাকেন।
আবেদনের প্রক্রিয়া:-
বিকাশ ভবন স্কলারশিপ বা স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের আওতায় আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে আপনাকে স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://svmcm.wbhed.gov.in/ এ যেতে হবে। এরপর হোম পেজে থাকা Registration অপশনে ক্লিক করুন এবং আপনার সামনে যে পেজটি আসবে তাতে উল্লেখিত সমস্ত তথ্য ভালোভাবে পড়ে উক্ত পেজের নিচের দিকে থাকা চেক বক্সের টিক করে Proceed for Registration অপশনে ক্লিক করুন। পরবর্তীতে আপনার সামনে যে পেজটি আসবে তাতে ছাত্র-ছাত্রীদের কোর্স অনুসারে নানা ধরনের পোর্টাল কার্যকর করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে থেকে আপনি আপনার কোর্স অনুসারে নির্ধারিত পোর্টালটি নির্বাচন করবেন এবং তার আওতায় থাকা Apply for fresh application অপশনে ক্লিক করবেন।
পরবর্তীতে আপনার সামনে বিকাশ ভবন স্কলারশিপের আওতায় রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি চলে আসবে। এরপর ফর্মটিতে আপনি সর্বশেষ কোন পরীক্ষাটি দিয়েছেন, কোন বোর্ড থেকে কত সালে পরীক্ষাটি দিয়েছেন, পরীক্ষার মোট নম্বর, পরীক্ষায় কত নম্বর পেয়েছেন, ক্লাস টেনের পরীক্ষার রোল নম্বর, কত শতাংশ নম্বর পেয়েছেন, বর্তমানে আপনি কোন কোর্সে পড়াশোনা করছেন, আপনার নাম, পিতার নাম সহ প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। তারপর আপনাকে আপনার পছন্দ সই পাসওয়ার্ড নির্বাচন করে নিয়ে Register অপশনে ক্লিক করলেই আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর একটি OTP চলে আসবে। উক্ত OTP -এর মাধ্যমে ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করলেই রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে এবং আপনার সামনে আপনার অ্যাপ্লিকেশন আইডিটি চলে আসবে।
রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে আপনি পুনরায় হোমপেজে চলে আসুন এবং হোম পেইজে থাকা Applicant Login অপশনে ক্লিক করে অ্যাপ্লিকেশন আইডি ও পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে LOGIN -এর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করুন। এরপর আপনার সামনে আসা পেজটিতে থাকা Edit Profile অপশনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য এবং নথি আপলোড করে SUBMIT অপশনে ক্লিক করুন, তাহলেই আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।
প্রয়োজনীয় নথিসমূহ:-
১. আবেদনকারীর পরিবারের বার্ষিক আয়ের সার্টিফিকেট।
২. নতুন শ্রেণীতে অথবা কোর্সে ভর্তির রশিদ।
৩. আবেদনকারীর ব্যাংকের পাস বই।
৪. আধার কার্ড।
৫. সর্বশেষ পরীক্ষার মার্কশীট।
৬. মাধ্যমিকের মার্কশিট।