আবেদন করুন ই-শ্রম কার্ডে এবং পেয়ে যান বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুবিধা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নানা ধরনের জনহিতকর যোজনা এবং স্কিম কার্যকর করা হয়েছে। এই সমস্ত জনদরদী প্রকল্পের আওতায় সারা ভারতের মহিলা, শিশু, কৃষক থেকে শুরু করে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক এমনকি বয়স্ক ব্যক্তিরাও অনুদান পেয়ে থাকেন। তবে বর্তমানে সারা দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য কার্যকরী ই-শ্রম যোজনা এবং ই-শ্রম কার্ড বর্তমানে সারা ভারতের সাধারণ জনগণের চর্চার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত দেশের দরিদ্র এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এই বিশেষ প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, বর্তমানে ২৮ কোটিরও বেশি শ্রমিক ই-শ্রম পোর্টালে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। এমনকি, আগামী দিনে আরো বেশি সংখ্যক শ্রমিক এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করবেন বলেই আশা রাখছেন কেন্দ্রীয় সরকার কর্মকর্তারা। আর আজকের এই পোস্টে আমরা ই-শ্রম কার্ড এবং ই-শ্রম যোজনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি।

ই-শ্রম যোজনার আওতাভুক্ত ব্যক্তিরা কি কি সুবিধা পেয়ে থাকেন?

১. ভারতে বসবাসকারী অসংগঠিত ক্ষেত্রের যে সমস্ত শ্রমিকদের ই-শ্রম কার্ড রয়েছে তারা এই ই-শ্রম যোজনার আওতায় প্রত্যেক মাসে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত পেয়ে যাবেন।
২. অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত যে সমস্ত শ্রমিকরা ই-শ্রম যোজনার আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন এবং বর্তমানে যাদের ই-শ্রম কার্ড রয়েছে তারা ৬০ বছরের পর থেকে প্রত্যেক মাসে পেনশন পাবেন। অর্থাৎ সমগ্র দেশের বয়সপ্রাপ্ত শ্রমিকদের ই-শ্রম যোজনার আওতায় পেনশন প্রদান করা হয়ে থাকে।
৩. ই-শ্রম যোজনার আওতাভুক্ত যেকোনো শ্রমিক কোনো কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে গেলে উক্ত শ্রমিককে ১ লক্ষ টাকার অনুদান দেয়া হয়ে থাকে।
৪. ই-শ্রম কার্ডের আওতাভুক্ত শ্রমিকের কোনো কারণে মৃত্যু ঘটলে শ্রমিকের আইনসম্মত উত্তরাধিকারী অথবা পরিবারকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে।
৫. ই-শ্রম যোজনার সুবিধাভোগী শ্রমিকদের সহায়তার জন্য পরিবারের শিশুদের জন্য সাইকেল, মহিলাদের জন্য সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়ে থাকে।

ই-শ্রম যোজনার আওতায় নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আবশ্যক যোগ্যতা কি কি?

কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী অন্যান্য প্রকল্পের মতই এই প্রকল্পের আওতায় আবেদনের ক্ষেত্রেও ভারতের নাগরিকদের বেশ কতগুলি শর্ত মেনে চলতে হয়। আর এই শর্তগুলি হল:

১. কেন্দ্র সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, শুধুমাত্র ১৬ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ব্যক্তিরাই ই-শ্রম যোজনার আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
২. কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত নির্দেশিকা অনুসারে, সমগ্র ভারতের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরাই কেবলমাত্র এই যোজনার অধীনে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার সুযোগ পাবেন।
৩. শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে আরো জানিয়ে রাখি যে, যেসকল শ্রমিকরা আয়কর প্রদান করে থাকেন কিংবা যে সমস্ত শ্রমিকদের নাম EPFO এবং ESIC-এর অধীনে রয়েছে তারা কোনভাবেই ই-শ্রম যোজনায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন না।

ই-শ্রম যোজনার আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করবেন কিভাবে?

কেন্দ্র সরকারের তরফে কার্যকরী ই-শ্রম যোজনার আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আপনাকে ই-শ্রম যোজনার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://eshram.gov.in/ -এ পৌঁছে যেতে হবে। এরপর হোম পেজে থাকা REGISTER ON e-SHRAM অপশনে ক্লিক করুন। পরবর্তীতে আপনার সামনে যে পেজটি আসবে তাতে আপনার মোবাইল নম্বরটি সঠিকভাবে লিখে এবং ক্যাপচা কোডটি পূরণ করে ওই পেজের নিচে উল্লিখিত প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে Send OTP অপশনে ক্লিক করতে হবে। পরবর্তীতে আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে যে OTP আসবে তা সঠিক তা নিয়ে সঠিকভাবে লিখে SUBMIT অপশনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার সামনে যে নতুন পেজটি আসবে তাতে আপনাকে আপনার আধার নম্বর এবং ক্যাপচা কোডটি সঠিকভাবে লিখে Submit অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর আপনার আধার নম্বরের সঙ্গে যুক্ত মোবাইল নম্বরে একটি OTP আসবে, এই OTP উক্ত পেজের সঠিক স্থানে সঠিকভাবে লিখুন এবং OTP ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করুন।

apply-to-e-shram-card

OTP ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করলেই আপনার সামনে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি চলে আসবে। এই ফর্মে আপনার নাম, পিতার নাম, বৈবাহিক স্থিতি, ব্লাড গ্রুপ সহ প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। এরপর আপনি নমিনি হিসেবে যে ব্যক্তিকে মনোনীত করেছেন তার নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, ফোন নম্বর, আপনার সঙ্গে নমিনীর সম্পর্ক সহ ফর্মে উল্লিখিত অন্যান্য তথ্যগুলি নির্ভুলভাবে পূরণ করুন। উপরোক্ত তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করার পর আপনাকে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্য, আপনার মাসিক উপার্জন, আপনার পেশা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য এবং আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সমস্ত ডিটেইলস সঠিকভাবে লিখে submit করতে হবে। Submit অপশনে ক্লিক করলেই আপনার সামনে আপনার ই-শ্রম কার্ডটি চলে আসবে। এরপর আপনি এটি ডাউনলোড করে আপনার ফোনে পিডিএফ হিসেবে রাখতে পারেন অথবা প্রিন্ট করে হার্ড কপি হিসেবেও নিজের কাছে রাখতে পারেন।

ভারতে বসবাসকারী অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকদের আর্থিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে যাতে কোনোরকম সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এই বিশেষ প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। এমনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা মারা গেলে তাদের স্ত্রী কিংবা সন্তানরা আর্থিক এবং সামাজিক দিক থেকে নানাভাবে বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। আর তাই এই সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের মৃত্যুর পর তাদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকার অনুদান দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, এমনটাই দাবি করা হচ্ছে বিভিন্ন সূত্রের তরফে প্রকাশিত তথ্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্প সমগ্র ভারতের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এমনকি অসংগঠিত শ্রমিকদের কল্যাণের খাতিরে কার্যকর এই প্রকল্প যে সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে তা বারংবার স্বীকার করেছেন ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রের রাজনৈতিক কর্তা ব্যক্তিরা।