গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নতুন প্রকল্প কার্যকর করা হলো কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে, পাওয়া যাবে ১৪০০ টাকার অনুদান।

সমগ্র ভারতের বিভিন্ন গ্রাম্য অঞ্চলে এবং প্রাকৃতিকভাবে দুর্গম অঞ্চলে এখনো পর্যন্ত উন্নত মানের হাসপাতাল গঠন করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে সমগ্র দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রাম্য অঞ্চলের গর্ভবতী মহিলারা ভালো চিকিৎসা পান না। তবে শুধুমাত্র ভালো চিকিৎসা নয় সমগ্র ভারতের নানাবিধ অঞ্চলের দরিদ্র, আর্থিকভাবে অসহায় শ্রেণীর মহিলারা গর্ভাবস্থা চলাকালীন পুষ্টিকর খাদ্য পান না, যার কারণে সন্তান জন্মের সময়, এমনকি সন্তান জন্মানোর পরে মা এবং সন্তান উভয়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। গর্ভাবস্থা চলাকালীন ভালোমানের পুষ্টিকর খাদ্য না গ্রহণ করার ফলে বহুক্ষেত্রেই সন্তান ডেলিভারির সময় মায়ের মৃত্যু ঘটে, এমনকি অপুষ্টির কারণে শিশু মৃত্যুর মতো ঘটনার সংখ্যাও কম নয়। আর এই সমস্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্যই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জননী সুরক্ষা যোজনা কার্যকর করা হয়েছে।

এই যোজনার মাধ্যমে সন্তান জন্মের পর মা এবং সন্তানের চিকিৎসা এবং পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। ইতিমধ্যেই সমগ্র ভারতের বহু সংখ্যক মহিলা জননী সুরক্ষা যোজনার আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে সমগ্র ভারতের সাধারণ জনগণের মধ্যে এই যোজনাটি বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। যার জেরে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মহিলা তথা সাধারণ জনগণের মধ্যে থেকে জননী সুরক্ষা যোজনা সংক্রান্ত নানাবিধ প্রশ্ন উঠে এসেছে। আর তাই আজকের এই পোস্টে আমরা জননী সুরক্ষা যোজনা সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার প্রশ্নের উত্তর নিয়ে হাজির হয়েছি।

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক কারা জননী সুরক্ষা যোজনার আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন:-

১. কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ভারতের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে কিংবা শহরাঞ্চলে বসবাসকারী BPL তালিকাভুক্ত মহিলারাই জননী সুরক্ষা যোজনা আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার সুযোগ পাবেন।
২. ভারতীয় মহিলারা শুধুমাত্র প্রথম দুটি সন্তানের জন্মের ক্ষেত্রেই জননী সুরক্ষা যোজনার আওতায় অনুদান পাবেন।
৩. ভারতে বসবাসকারী ১৯ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সী গর্ভবতী মহিলারাই কেবলমাত্র জননী সুরক্ষা যোজনার আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলার বয়স ১৯ বছরের কম হলে তারা কোনভাবেই জননী সুরক্ষা যোজনার আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন না।
৪. যে সমস্ত মহিলারা কোনো সরকারি হাসপাতালে অথবা সরকারের তরফের নির্ধারিত বেসরকারি হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তারাই জননী সুরক্ষা যোজনা আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।

আরও পড়ুন:- মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে চান? এই ঘরোয়া পদ্ধতি গুলি মেনে চলুন।

জননী সুরক্ষা যোজনা আওতায় কি কি সুবিধা পাওয়া সম্ভব?

১. গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী কোনো মহিলা যদি সরকারি হাসপাতালে অথবা সরকারের তরফে নির্ধারিত যেকোনো বেসরকারি হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন তবে তিনি এই যোজনার মাধ্যমে ১৪০০ টাকার অনুদান পেয়ে যাবেন।
২. শহরাঞ্চলে বসবাসকারী কোনো মহিলা যদি সরকারি হাসপাতালে অথবা সরকারের তরফে নির্ধারিত যেকোনো বেসরকারি হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন তবে তিনি এই যোজনার আওতায় ১ হাজার টাকার অনুদান পাবেন।
৩. অন্যদিকে বিপিএল তালিকাভুক্ত কোন মহিলা যদি নিজের বাড়িতেই সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন তবে তিনি এই যোজনার আওতায় ৫০০ টাকার অনুদান পেয়ে যাবেন।

সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি যে, প্রসবের পর জননী সুরক্ষা যোজনার অনুদানের টাকা সরাসরি এই যোজনার সুবিধাভোগী মহিলাদের ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়ে থাকে।

কিভাবে জননী সুরক্ষা যোজনার আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করা সম্ভব?

এই যোজনার আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আপনাকে জননী সুরক্ষা যোজনার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে এবং Apply online অপশনে ক্লিক করতে হবে। উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলেই আপনার সামনে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি চলে আসবে। এরপর প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য এবং নথি সহকারে ফর্মটি পূরণ করতে হবে। উক্ত ফর্মে আবেদনকারী মহিলার নাম, বয়স, ঠিকানা, ইমেইল এড্রেস, ফোন নম্বর, ব্যাংক একাউন্ট নম্বর, ব্যাংকের ব্রাঞ্চের নাম, ব্যাংকের নাম, আইএফএসসি কোড সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। সবশেষে ফর্মে উল্লিখিত প্রয়োজনীয় নথিগুলি সঠিকভাবে আপলোড করে Submit অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি সঠিকভাবে সাবমিট করতে হবে। আবেদনপত্রটি সাবমিট করার পর আপনাকে একটি কোড দেওয়া হবে, এটি পরবর্তীতে প্রয়োজন হবে। সুতরাং অবশ্যই কপি করে রাখবেন।

এছাড়াও আপনারা জননী সুরক্ষা যোজনার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি ডাউনলোড করে নিয়ে তাতে উল্লেখিত সমস্ত তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথি সহকারে আপনার নিকটবর্তী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র জমা দেওয়ার মাধ্যমেও জননী সুরক্ষা যোজনা আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। পরবর্তীতে আপনার এলাকার আশা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করলে আপনি এই যোজনা সংক্রান্ত সমস্ত প্রকার তথ্য পেয়ে যাবেন।

আবেদনের ক্ষেত্রে কি কি নথি প্রয়োজন হয়ে থাকে?

১. গর্ভবতী মহিলার আধার কার্ড।
২. আবেদনকারীর স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র।
৩. JSY কার্ড।
৪. ডেলিভারি সার্টিফিকেট।
৫. বিপিএল রেশন কার্ড।
৬. আবেদনকারীর ব্যাংক একাউন্টের সমস্ত প্রকার তথ্য।
৭ . গর্ভবতী মহিলার মোবাইল নম্বর।
৮. আবেদনকারী মহিলার পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।

Leave a Comment