প্রাইমারি টেট পরীক্ষা নিয়ে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে যে যে ঘটনাগুলি ঘটেছে তার সাক্ষী হয়ে রয়েছেন সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণ। ইতিপূর্বে ২০১৪ এবং ২০১৭ সালের প্রাইমারি টেটের যোগ্য পরীক্ষার্থীদের বঞ্চিত করার জন্য রাজ্যের চাকরিপ্রার্থী সহ সাধারণ মানুষ বারংবার আঙ্গুল তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দিকে। এমনকি এই সমস্ত দুর্নীতির বিচারের জন্য চাকরিপ্রার্থীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে দুর্নীতির মামলার তদন্ত এবং বিচার বহুদূর পৌঁছালেও এখনো পর্যন্ত সমস্ত মামলার মীমাংসা হয়নি। আর মামলার তদন্ত চলাকালীন পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রাথমিক টেটের আয়োজন করা হয়েছিল। এমনকি প্রাথমিক টেটের সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে প্রায় ২ মাসের মাথায় পর্ষদের তরফে ২০২২ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের রেজাল্টও প্রকাশ্যে আনা হয়েছিল। আর এবারেও পর্ষদের তরফে প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য আরো এক নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আয়োজিত প্রাথমিক টেট পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে প্রাথমিক টেটের ইন্টারভিউ নিয়ে জোরকদমে চর্চা শুরু হয়েছিল। তবে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ঠিক পরেই ২০১৪ এবং ২০১৭ সালের চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ সংক্রান্ত নানা ধরনের তথ্য প্রকাশ করা হলেও পর্ষদের পক্ষ থেকে ২০২২ সালের টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়ে কোনরূপ তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে এবারে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে যে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তা আরো একবার আশার আলো দেখাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের চাকরিপ্রার্থীদের। এই বিজ্ঞপ্তিতে পর্ষদের তরফে সমগ্র রাজ্যের টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গব্যাপী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অষ্টাদশ দফার ইন্টারভিউয়ের আয়োজন করতে উদ্যোগী হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।
এর পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে যে, ইতিপূর্বে ২০২২ সালের প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় যে সমস্ত চাকরিপ্রার্থীরা D.EL.Ed. স্পেশাল এডুকেশন এবং B.Ed. কোর্সকে ট্রেনিং কোয়ালিফিকেশন বলে উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে সেই ট্রেনিং কোয়ালিফিকেশনে পরিবর্তন করতে পেরেছিলেন তাদের জন্যই এই ইন্টারভিউয়ের প্রক্রিয়া আয়োজন করা হয়েছে। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আয়োজিত এই অষ্টাদশ দফার ইন্টারভিউয়ে শুধুমাত্র এইসকল চাকরিপ্রার্থীরাই অংশগ্রহণ করতে পারবেন। পর্ষদের তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়েছে যে, পর্ষদের তরফ আগামী ১৭ ই জুন, ২০২৩ তারিখে এই সমস্ত চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:- আবেদন করুন আব্দুল কালাম স্কলারশিপে এবং পেয়ে যান ২০,০০০ টাকার অনুদান।
তবে এখানেই শেষ নয়, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ১৭ ই জুনের ইন্টারভিউয়ের জন্য চাকরিপ্রার্থীদের যে যে নথিগুলি নিয়ে যেতে হবে তারও তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যে যে নথিগুলি প্রয়োজন হবে তা হল:
১. প্রাথমিক টেট পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড
২. প্রাথমিক টেটের রেজাল্ট
৩. বয়সের প্রমাণপত্র (মাধ্যমিক পরীক্ষার এডমিট/ মাধ্যমিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট)
৪. বোর্ড/কাউন্সিলের তরফে কার্যকরী মাধ্যমিক কিংবা এর সমতুল্য যে কোন পরীক্ষার মার্কশিট এবং সার্টিফিকেট।
৫. বোর্ড/কাউন্সিলের তরফে কার্যকরী উচ্চ মাধ্যমিক বা এর সমতুল্য যেকোনো পরীক্ষার মার্কশিট এবং সার্টিফিকেট।
৬. D.EL.Ed. কিংবা D.Ed.(স্পেশাল এডুকেশন) অথবা B.Ed. কিংবা B.P.Ed. অথবা B.Ed.(স্পেশাল এডুকেশন) কিংবা এর সমতুল্য যেকোনো পরীক্ষার দুই বছরের মার্কশিট এবং সার্টিফিকেট।
৭. ইউনিভার্সিটি তরফে জারি করা BA/B.Sc./B.Com. সহ যেকোনো কোর্সের আওতায় স্নাতক স্তরে উত্তীর্ণ হওয়ার সার্টিফিকেট।
৮. রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা জাতিগত শংসাপত্র। এটি শুধুমাত্র তপশিলি জাতি তপশিলি উপজাতি ওবিসিই এবং ওবিসিডি সম্প্রদায় ভুক্ত চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।
৯. বিশেষভাবে সক্ষম ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট।
১০. পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে জারি করা Exempted category সার্টিফিকেট।
১১. এক্স সার্ভিস ম্যানদের ক্ষেত্রে এক্স সার্ভিসম্যান সার্টিফিকেট।
১২. প্যারা টিচারদের ক্ষেত্রে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে জারি করা First engagement letter।
১৩. প্যারা টিচারদের ক্ষেত্রে D.P.O কিংবা S.D.O এর তরফে জারি করা অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট।
১৪. টেট সম্পর্কিত সমস্ত প্রকার নথিপত্র।
১৫. আবেদনকারী চাকরি প্রার্থীর ভোটার আইডি অথবা আধার কার্ড।
১৬. আবেদনকারীর সেল্ফ অ্যাটেস্টেড করা একটি পাসপোর্ট সাইজের সদ্যতোলা রঙিন ছবি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য পর্ষদের তরফে জারি করা এই নির্দেশিকায় আরো জানানো হয়েছে যে, যদি কোন কারণে কোনো আবেদনকারীকে অযোগ্য বলে মনে হয় তবে তিনি ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন না। এক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি রয়েই যায় তা হল, ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কল লেটার পাওয়া যাবে কোথা থেকে। আর এই প্রশ্নের উত্তরও দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে কার্যকর এই নির্দেশকার মাধ্যমে। পর্ষদের পক্ষ থেকে জারি করা এই নির্দেশিকার মাধ্যমে রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে যে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://wbbpe.org/ থেকেই যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা নিজস্ব কল লেটার ডাউনলোড করে নিতে পারবে। পর্ষদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হোম পেইজে ২০২২ সালের চাকরিপ্রার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট পোর্টাল কার্যকর করা হয়েছে। আর এই পোর্টালের মাধ্যমেই তারা বাড়িতে বসে নিজস্ব কল লেটার ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।