মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে চান? এই ঘরোয়া পদ্ধতি গুলি মেনে চলুন।

বর্তমানে সাধারণ মানুষ নিজের কর্মক্ষেত্রে এতটাই ব্যস্ত হয়ে উঠেছে যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্ত ব্যক্তিদের সারাদিন নানাবিধ মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। আর তাতেই সাধারণ মানুষ মাথাব্যথা থেকে শুরু করে মাইগ্রেন সহ নানা ধরনের জটিল অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। তবে মাথাব্যাথাকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অসুখ হিসেবে না ধরা হলেও দিনের পর দিন অবহেলা করতে থাকলে মাথাব্যথার কারণেও আপনাকে যথেষ্ট ভুক্তভোগী হতে হবে। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় মাথাব্যথার মূল কারণ মাইগ্রেন, আবার অনেকক্ষেত্রেই মানসিক চাপ থেকেও মাথাব্যাথা হয়ে থাকে। যদিও বিভিন্ন ক্ষেত্রের রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে যে, মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের কারণে যে মাথাব্যথা হয়ে থাকে তা সংক্রান্ত ভুক্তভোগী মানুষের সংখ্যাই অত্যন্ত বেশি। আর রোজদিনের এই মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে মানুষকে প্রতিনিয়ত ওষুধের সাহায্য নিতে হয়। যার জেরে আজকের এই পোস্টে আমরা মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার এমন কতগুলি বিশেষ ঘরোয়া পদ্ধতি নিয়ে হাজির হয়েছে, যার মাধ্যমে আপনারা চটজলদি মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।

মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়ার এই সমস্ত ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:-

১. প্রত্যেকদিন প্রচুর পরিমাণে জলপান করুন:- বহুক্ষেত্রেই দেখা যায় পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান না করার কারণে শরীরে জলের ঘাটতি তৈরি হয়। আর দেহে জলের ঘাটতি থেকেই ডিহাইড্রেশনের মত গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে, যা থেকে মাথাব্যথার মত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রত্যেকদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করুন এবং নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন। বিজ্ঞানীদের নানাবিধ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গিয়েছে যে, প্রচুর পরিমাণ জল পান করলে মাথাব্যাথা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে জলের বদলে তাজা ফল, ফলের রস খেলেও উপকার মিলবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মাথাব্যাথা হলেই চা কিংবা কফির মত পানীয় পান করার মাধ্যমে মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে চান। কিন্তু তা করা একেবারেই উচিত নয়। মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চা কফির মত ক্যাফিন যুক্ত পানীয় বর্জন করুন। এই সমস্ত পানীয়ে থাকা ক্যাফিন শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে সাহায্য করে। সুতরাং মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে প্রত্যেকদিন প্রচুর পরিমাণে জল, ফলের রস পান করুন এবং তাজা ফল খান।

২. মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পর্যাপ্ত ঘুম:- আমাদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিভিন্ন সমীক্ষায় প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গিয়েছে যে, সুস্থ থাকতে একজন মানুষের প্রত্যেকদিন অন্ততপক্ষে ছয় ঘন্টা ঘুম অপরিহার্য। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সকালবেলা তাড়াতাড়ি ওঠা এবং রাতে দেরি করে ঘুমাতে যাওয়ার ফলে সাধারণ মানুষের ঘুম পূরণ হয় না। আর এর থেকেই মাথাব্যাথার সূত্রপাত হয়ে থাকে। এমনকি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে ইনসমনিয়ার মত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, আর তা থেকে মাথাব্যাথার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি প্রতিনিয়ত আপনার ঘুমের সাইকেল ব্যাহত হতে থাকলেও মাথাব্যাথার মত সমস্যা দেখা দেবে। সুতরাং মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে প্রত্যেকদিন রাতেরবেলা তাড়াতাড়ি ঘুমান এবং সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠুন, তবে মনে রাখবেন প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টার ঘুম অত্যন্ত জরুরী।

আরও পড়ুন:- বাড়িতে বসেই নিজের ফোন থেকে ডাউনলোড করুন নতুন ভোটার তালিকা। জেনে নিন পদ্ধতি।

৩. খাদ্য তালিকায় থাকুক ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার:- বৈজ্ঞানিকদের মতানুসারে শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব ঘটলেও মাথাব্যাথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সুতরাং মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে নিজের প্রতিদিনের খাবারে বেশ কিছু ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার রাখুন। কাজুবাদাম, ফ্ল্যাক্সসিড, পেস্তা বাদাম, অ্যাভোকাডো, ডার্ক চকলেট সহ যেকোনো ধরনের বাদামেই ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, এছাড়াও সামুদ্রিক মাছ, কাজুবাদাম, কুমড়ার বীজ থেকেও ম্যাগনেসিয়ামের মত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ মৌলের ঘাটতি পূরণ হয়ে থাকে। সুতরাং মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে আপনার প্রত্যেকদিনের খাদ্য তালিকায় উপরোক্ত খাদ্যগুলি রাখার চেষ্টা করুন।

৪. অ্যালকোহল এবং হিস্টামিন যুক্ত বর্জন করুন:- প্রচুর মানুষই প্রতিনিয়ত অ্যালকোহল গ্রহণ করে থাকেন। আর তা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। প্রতিনিয়ত অ্যালকোহল গ্রহণ করলে শরীরে নানা ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলে জানা গিয়েছে যে, মদপানের কারণে মাথাব্যথা শুরু হতে পারে। সুতরাং মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে ও শারীরিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রতিনিয়ত অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন, প্রয়োজনে অ্যালকোহল একেবারেই বর্জন করুন। এছাড়াও মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে হিস্টামিন যুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে দূরে থাকতে হবে। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় হিস্টামিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে দেহে হিস্টামিনের পরিমাণ অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়, আর এর ফলে মাথাব্যথা থেকে শুরু করে স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা, এমনকি ইমিউন সিস্টেমের সমস্যাও পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে অতিরিক্ত হিস্টামিন যুক্ত খাদ্য এবং অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

৫. মাথায় ম্যাসাজ করুন এবং বিশ্রাম নিন:- মাথাব্যাথা শুরু হলে আপনার শরীরকে বিশ্রাম দিন। শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কাজগুলি এড়িয়ে চলুন এবং একটি কম আলোকিত ঘরে বসে শরীরকে রিলাক্স অবস্থায় রাখুন। প্রয়োজনে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে পারেন। এই সময় হালকা সাউন্ডে আপনার প্রিয় গান শুনতে পারেন, যা চাপ কমাতে সাহায্য করে। আপনার মানসিক চাপ কমলেই মাথাব্যাথা থেকেও মুক্তি মিলবে। এছাড়াও মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ম্যাসাজের সাহায্য নিতে পারেন। আপনার মাথার যে অংশে ব্যথা করছে সেই অংশে হালকাভাবে ম্যাসাজ করলে সহজেই মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

৬. গরম জলে স্নান করুন:- মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে গরম জলে স্নান এক অব্যর্থ উপায়। সুতরাং মাথাব্যাথা থেকে চটজলদি মুক্তি পেতে গরম জলে স্নান করুন। এর ফলে আপনার মাথা এবং ঘাড়ের পেশি ঢিলে হবে, যা রক্ত প্রবাহকে দ্রুত করবে। ফলত আপনিও মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।

উপরোক্ত বিষয়গুলিকে নজরে রেখে বলা যায় যে, মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে মানসিক চাপ কমান এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখুন। মাথাব্যাথা শুরু হলে তা অবজ্ঞা করে কাজের মধ্যে থাকা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাপ নেওয়ার মত অভ্যাসগুলি ত্যাগ করুন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিন। এর পাশাপাশি প্রত্যেকদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমও অত্যন্ত জরুরী। সুতরাং নিজের মানসিক চাপ কমান এবং মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার চেষ্টা করুন, এর পাশাপাশি উপরোক্ত পদ্ধতিগুলি মেনে চলুন তাহলেই আপনি মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি পাবেন।