একটা সময় টাকা জমানো মানে ছিল সেটা ব্যাংক অথবা পোস্ট অফিসে বিনিয়োগ। এছাড়া ছোট ছোট আমানতে টাকা মানুষজন ঘরেও জমাতেন। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে মানুষের বিনিয়োগের ধারা বদলে গেছে। পরিশ্রমের উপার্জনের টাকা বিনিয়োগের জন্য একাধিক রাস্তা খোলা রয়েছে। চালু রয়েছে একাধিক লাভজনক স্কিম। মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ (Mutual Fund) একটা সময় অনেক ভাবনা-চিন্তার কারণ হলেও এখন খুব স্বাভাবিক ছন্দেই মানুষ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ (Mutual Fund) করে।
অল্প সময় টাকা দ্বিগুণ করার জন্য বিকল্প নেই মিউচুয়াল ফান্ডের (Mutual Fund)। কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডে (Mutual Fund) বিনিয়োগের আগে কিছু বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরি। সেগুলি না জানলে সমস্যা হতে বাধ্য। আজকের প্রতিবেদনে আমরা এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আপনিও যদি ভেবে থাকেন, মিউচুয়াল ফান্ডে অর্থ বিনিয়োগ করে লাভবান হবেন, তাহলে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন অবশ্যই পড়ে নেবেন। মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund) সংক্রান্ত বহু তথ্যের উল্লেখ থাকবে এই প্রতিবেদনে।
Mutual Fund Investment 2024
মানুষের মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ড সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণাগুলি অনেকটাই বদলেছে। আগে যেমন মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund) বিনিয়োগ মানে বিরাট একটা চিন্তাভাবনার পর্যায়ে ছিল, বর্তমানে কিন্তু কারণে অকারণে ফান্ড (Mutual Fund) কিনে ফেলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মানুষ এখন অনেক বেশি পুঁজি সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন।
পছন্দসই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে অনেকেই অল্প সময়ে আমানত দ্বিগুণ করে তুলছে। আর সেখান থেকে আগ্রহ আরো বাড়ছে। আগামী দিনের ফের মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund) বিনিয়োগের পথে হাঁটছেন তাঁরা। যদিও বিনিয়োগের আগে খেয়াল রাখা জরুরী, উদ্দেশ্যহীনভাবে পুঁজি ঢালা মোটেই যুক্তিযোগ্য নয়। একটা উদ্দেশ্য নিয়ে তবেই পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে।
এতে একদিকে যেমন গ্রাহকের উদ্দেশ্য সফল হবে, অন্যদিকে দ্বিগুণ রিটার্ন পেয়ে বিনিয়োগকারী লাভের মুখ দেখবেন। তবে যদি বিনিয়োগকারী উদ্দেশ্যহীন ভাবে ক্রমে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে থাকেন, তবে প্রয়োজনীয় লাভের লাভ তো হয়ই না, উল্টে সেই বিনিয়োগ কারীর ইনভেস্ট করার আগ্রহ কমতে থাকে। কারণ লাভের মুখ না দেখলে কেউই সেই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখাতে পারেন না। তাই অবশ্যই মিউচুয়াল ফান্ডের (Mutual Fund) বিনিয়োগের আগে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে আপনার জন্য সঠিক ফান্ড বাছাই করতে হবে।
Mutual Fund Investment Tips 2024
১) আমরা প্রথমেই বলেছি মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগের পথে নামলে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় লাভ আসে না। তাছাড়া আপনার লগ্নির উদ্দেশ্য পছন্দসই মিউচুয়াল ফান্ড বাছাই করতে সাহায্য করবে।
আপনি যে রকম লাভ চাইছেন আশা করা যায় সেই ধরনের রিটার্ন আপনি পাবেন। লগ্নির আগেই খেয়াল রাখবেন, সঠিক মিউচুয়াল ফান্ড বেছে নেওয়া একরকম ভাবে আপনার দায়িত্ব। তারপর সে ফান্ডে নিজের প্রয়োজনমতো ইনভেস্ট করুন।
২) মিউচুয়াল ফান্ড শুধুমাত্র বেছে নিলেই হবে না, সেই ফান্ডে আপনি স্বল্পকালীন না দীর্ঘকালীন বিনিয়োগ করতে চান সেটাও কিন্তু বিবেচনা করতে হবে। একজন বিনিয়োগকারী কতটা রিটার্ন চাইছেন, বিনিয়োগকারী কতটা ঝুঁকি নিতে পারবেন, সবটাই কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund) বিনিয়োগের আগে ভাবতে হবে। ফান্ডের বিনিয়োগ স্বল্পকালীন, দীর্ঘকালীন উভয়ই হয়।
আর ঝুঁকির মাত্রা নির্ভর করে অনেক ক্ষেত্রেই। মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগে বিস্তর লাভ পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগটা করতে হয়। আর সেই ঝুঁকি নিতে অনেকেই অস্বীকার করেন। তাই আপনাকে মনে রাখতে হবে এক্ষেত্রে বিনিয়োগে কিন্তু ঝুঁকি থাকবেই।
৩) যদি আপনি ভাবেন আপনি স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ করবেন, সেক্ষেত্রে লিক্যুইড ফান্ডে বিনিয়োগ করুন। কারণ স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য এই লিকুইড ফান্ড উপযুক্ত। আর যদি আপনি ভেবে থাকেন দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করবেন তবে এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার জন্য ইক্যুইটি ফান্ড বেছে নিন। এটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত।
৪) ‘ফান্ডের পুঁজি’ এই বিষয়টি ইনভেস্টমেন্টে ক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। একজন বিনিয়োগকারী কে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের আগে দেখে নিতে হবে যিনি তহবিলে বিনিয়োগ করছেন, তাঁর পুঁজি যেন অবশ্যই মোটা অংকের হয়। অর্থাৎ বিনিয়োগের আগেই বুঝে নিতে হবে যে, সংশ্লিষ্ট ফান্ডের স্থিতিশীলতা যেন মাত্র এক থেকে দুজন লগ্নিকারীর উপর নির্ভর করে না থাকে।
৫) আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো ফান্ড ম্যানেজার। অনেকেই ফান্ড ম্যানেজার খোঁজার সময় মুখোমুখি হতে পারেন আলফা নামক একটা শব্দের। আসলে এই আলফা হল মিউচুয়াল ফান্ড ম্যানেজারের পারফরমেন্সের সূচক। ম্যানেজারের ব্যর্থতা, সাফল্য নির্ণয় করা হয় আলফার নিরিখে।
যদি দেখেন আলফা সূচক পজেটিভ, তাহলে বুঝে নেবেন ফান্ডে লাভ আছে। আর যদি দেখেন যে আলফা সূচক নেগেটিভ তাহলে বুঝেই নেবেন এই ফান্ডের পারফরমেন্স সন্তোষজনক নয়। মোটামুটি তিন মাস অন্তর বসানো হয় রেটিং। ইনভেস্ট করার আগে ফান্ড ম্যানেজারের পজিটিভ ও নেগেটিভ রেটিং দেখে নেবেন।
৬) সর্বোপরি বলতেই হবে, মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগ করার আগে পড়াশোনা করে নেওয়া জরুরি। যদি আপনি কোন ফান্ড সম্পর্কে সম্পূর্ণ রূপে নিশ্চিত না হন, মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা আপনার না থাকে অথবা পড়াশোনা সেভাবে করা না থাকে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তিনি আপনাকে আপনার পছন্দসই উপযুক্ত ফান্ড বেছে নিতে সাহায্য করবে। মোট কথা সবদিক দেখে বুঝে তবেই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ।