বহুদিন ধরে মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন? এই ৭ টি নিয়ম ফলো করে মুক্তি পান মাইগ্রেন থেকে

মানব সভ্যতা যত উন্নতির পথে এগিয়েছে ততই সমগ্র বিশ্ব জুড়ে নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। আর বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের রোগের পাশাপাশি রোগের ভুক্তভোগী মানুষের সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আর তেমনই একটি রোগ হলো মাইগ্রেন। ২০১৯ সালের এক সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে যে, সারা ভারতের মোট জনগণের মধ্যে ২১৩ মিলিয়ান দেশবাসী মাইগ্রেনের সমস্যার ভুক্তভোগী। ডাক্তারদের মতানুসারে সাধারণ মানুষের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, নানা ধরনের বদভ্যাস এবং মাইগ্রেনের সমস্যাগুলিকে ক্রমাগত এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতার কারণে প্রতিনিয়ত মাইগ্রেনের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে একটা সময় পর ওষুধ খাওয়ার পরও মাইগ্রেনের মাথা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। যদিও অনেকক্ষেত্রেই বংশগতিজনিত কারণ এবং হরমোনের পরিবর্তন -এর কারণেও মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সমস্যা যখন রয়েছে সেই সমস্যার উপায়ও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনের রুটিনে বেশ কতগুলি ছোট ছোট পরিবর্তন আনলেই মাইগ্রেনের সমস্যা অত্যন্ত সহজেই নিরাময় করা যায়।

চলুন তবে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কি কি করণীয় তা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:-

১. প্রত্যেকদিন প্রচুর পরিমাণে জল এবং ফলের রস খান:- বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, অধিকাংশ মানুষই ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় ভোগেন। আর এই ডিহাইড্রেশনের সমস্যাই মাইগ্রেনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কারণ। সুতরাং মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রত্যেকদিন প্রচুর পরিমাণে জল খান। এছাড়াও জলের পাশাপাশি মৌসম্বি লেবু, কমলালেবু, আম, তরমুজ, আপেল, পেঁপে, নাশপাতি, ফুটি, আঙুর -এর মত নানা ধরনের মৌসুমী ফল, বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস, শরবত, আমলকির রস পান করুন। এর ফলে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা কমবে এবং এই সমস্ত ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কারণে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকেও চটজলদি আরাম মিলবে।
২. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিছু শাকসবজি থাকুক:- বিভিন্ন সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা আপনাকে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে। এছাড়াও সবুজ শাকসবজিতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মাইগ্রেনের সমস্যাকে দূর করতে সাহায্য করে। আর তাই মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতে আপনার প্রত্যেকদিনের খাদ্য তালিকায় কুমড়ো, আলু, গাজর, ঝিঙে, লাউ, চিচিঙে, করলা, পালং শাক লেটুস শাকের মতো শাক-সবজিগুলি রাখুন। এছাড়াও কম ফ্যাটযুক্ত চিকেন এবং মাছও মাইগ্রেনের সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট সাহায্যকারী।

৩. মাইগ্রেনের সমস্যা সমাধানে জিরে আর এলাচ মেশানো চা খান:- শীত হোক বা গরম পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারতের সাধারণ মানুষের কাছে চা অপরিহার্য। মাইগ্রেন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সাধারণ চায়ের বদলে বিশেষ হারবাল চা পানের অভ্যাস করুন। আর এই হারবাল চা আপনি নিজের বাড়িতেই তৈরি করে নিতে পারেন। এর জন্য চা তৈরীর সময় চায়ের উপকরণের সাথে জিরে এবং এলাচ মেশাতে হবে। হার্বাল চা তৈরি করতে না পারলে আদা চাও খেতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হার্বাল চা বা ভেষজ চা এবং আদা চা অপরিহার্য। তবে শুধুমাত্র ভেষজ চা নয় ব্রাহ্মী, শঙ্খপুষ্পী, অশ্বগন্ধা, যষ্টিমধুর মতো ভেষজগুলিও মাইগ্রেন থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। এছাড়াও মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আপনি লবঙ্গের পাউডার তৈরি করে দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন কিংবা লবঙ্গ চিবিয়েও খেতে পারেন।

আরও পড়ুন:-রেশন বিতরণ সংক্রান্ত নতুন নিয়ম জারি করলো রাজ্য সরকারের। বিস্তারিত জেনে নিন।


৪. মাইগ্রেনের সমস্যা সমাধানে ঘি:- বিশেষজ্ঞদের মতে মাইগ্রেনের সমস্যার সমাধানে ঘি অত্যন্ত উপকারী। সুতরাং আপনিও যদি মাইগ্রেনের ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন তবে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভাত কিংবা রুটির সঙ্গে এক চামচ করে ঘি খান। এছাড়াও নাকে ঘি লাগালে অতিরিক্ত টেনশন এবং মাথা ব্যাথা কমে যায়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, প্রত্যেকদিন ঘুমোনোর সময় নাকে দুই ফোঁটা করে গরম ঘি দিলে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

৫. মাইগ্রেনের সমস্যা সমাধানে ব্যায়াম:- মাইগ্রেন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রত্যেকদিন নিয়ম করে যোগ ব্যায়াম করুন। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রাণায়ামের মাধ্যমে মাইগ্রেন থেকে মুক্তি মিলবে। আপনি আপনার সুবিধা অনুসারে সকালে কিংবা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করতে পারেন। যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়াম আপনার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার অবাঞ্ছিত চিন্তা কমাতেও সাহায্য করে। সুতরাং মাইগ্রেনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৬. মাইগ্রেন থেকে মুক্তি দেবে কিসমিস এবং বাদাম:- আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে প্রত্যেকদিন ১০ থেকে ১৫ টি ভিজিয়ে রাখা কিসমিস খেতে পারলে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি পাওয়া যায়। কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং পটাশিয়াম থাকে যা আপনাকে মাইগ্রেনের থেকে হওয়া মাথা যন্ত্রণা এবং অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে একটানা ১২ সপ্তাহ ধরে ভেজানো কিসমিস খেতে পারলে মাইগ্রেনের সমস্যা অনেকাংশেই কমে যায়। তবে কিসমিসের পাশাপাশি বাদাম খেলেও মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়। বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। অন্যদিকে বাদামে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আপনার মাথা যন্ত্রণা কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। আর তাই আপনিও যদি মাইগ্রেনের ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন তবে মাইগ্রেন থেকে মুক্তি পেতে প্রতিনিয়ত কিসমিস এবং বাদাম খান।

৭. মাইগ্রেন মাথা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে ল্যাভেন্ডার তেল:- মাইগ্রেনের সমস্যা কমানোর ক্ষেত্রে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি বস্তু হলো ল্যাভেন্ডার তেল। ল্যাভেন্ডার তেলের এক বিশেষ ধরনের অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণ রয়েছে যা আপনাকে তাৎক্ষণিক মাইগ্রেনের মাথা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে। সুতরাং মাইগ্রেনের মাথা যন্ত্রণা শুরু হলেই নাকে ল্যাভেন্ডার তেল দিয়ে অন্ততপক্ষে ১৫ মিনিট ধরে শুঁকতে হবে, তাহলেই মাইগ্রেনের মাথা যন্ত্রণা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন।

উপরোক্ত বিষয়গুলি নজরে রেখে বলা যায় যে, মাইগ্রেনের সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সুস্থ জীবনযাপন এবং সুষম খাদ্যের অত্যন্ত প্রয়োজন। সুতরাং আপনিও যদি একটি নির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট ফলো করে চলেন এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের বদলে একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুসারে দৈনন্দিন কাজকর্মে মন দেন তবে মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে অবশ্যই মুক্তি মিলবে।