চাঁদের মাটিতে কেন চন্দ্রযান ৩ -কে পাঠানো হচ্ছে, জেনে নিন এখনই।

মানুষ বরাবরই অজানাকে জানতে চেয়েছে, অচেনাকে চিনতে চেয়েছে। আর এই অচেনাকে চেনার জন্য এবং অজানা সমস্ত তথ্য জানার জন্য মানুষ বারবার মহাকাশে কিংবা মাটির নিচে অথবা সাগরের গভীরে অভিযানে পাঠিয়েছে নানা যন্ত্রকে। তবে চাঁদকে নিয়ে মানুষ আদিম কাল থেকেই বড্ড বেশি উৎসাহী। পৃথিবীর অসম্ভব কাছে থাকা চাঁদ মানুষের ভীষণ চেনা হয়েও যেন সম্পূর্ণরূপে অচেনা। আর তাই মানুষ চাঁদকে চেনার জন্য বারংবার বিভিন্ন প্রকার যন্ত্র চাঁদের মাটিতে অবতরণ করিয়েছে। আর এই একই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এবারে ভারতের মহাকাশ গবেষণাগারী সংস্থা ইসরোর তরফে চন্দ্রযান ৩ কে চাঁদে পাঠানোর জন্য সমস্ত রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

মাত্র ৬১৫ কোটি টাকায় চন্দ্রযান ৩ -এর আয়োজন করে সমগ্র বিশ্বের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক মহলের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের নজর কেড়েছে ভারত। আর তাতেই সমগ্র ভারতের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্বের নাগরিকদের মধ্য থেকে বারংবার বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন উঠে আসতে শুরু করেছে। তবে এক্ষেত্রে মূল যে প্রশ্নটি উঠে এসেছে তা হল চাঁদ সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য জানা সত্ত্বেও ভারত কেন পুনরায় চন্দ্রযান ৩ -এর আয়োজন করছে। বর্তমানে যখন মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষা সম্ভব কিনা তা নিয়ে গবেষণা প্রায় তুঙ্গে, এমতাবস্থায় চন্দ্র অভিযানের তাৎপর্য নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন তুলেছেন সমগ্র বিশ্ব তথা ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

আর এই প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্ন রিপোর্ট মারফত তুলে ধরা হয়েছে যে, স্বল্প খরচে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের পাথেয় হয়েছে চন্দ্রাভিযান। চাঁদের বায়ুমণ্ডল না থাকাই এই বিষয়টির মূল কারণ, এমনটাই মনে দাবি করা হচ্ছে এই সমস্ত সূত্রের তরফে প্রকাশিত রিপোর্টে। মনিপাল সেন্টার ফর ন্যাচারাল সায়েন্সের অধ্যাপক ও পরিচালক ড. পি. শ্রীকুমার সমগ্র দেশের সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে জানিয়েছেন যে, পৃথিবীর তুলনায় চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ বল বহুলাংশেই কম, শুধু তাই নয় চাঁদের গতিশীলতাও পৃথিবীর তুলনায় কম। যার কারণে চাঁদের কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করা যেকোনো মহাকাশযানের পক্ষে অত্যন্ত সহজসাধ্য বিষয়। অন্যদিকে চাঁদের বায়ুমণ্ডল না থাকায় চাঁদে রকেট পাঠাতেও যথেষ্ট কম শক্তি ব্যয় হয়। ফলত খুব স্বাভাবিকভাবেই মঙ্গল কিংবা অন্য যেকোনো গ্রহে মহাকাশে পাঠানোর তুলনায় চাঁদে গবেষণার জন্য মহাকাশযান পাঠানো অধিক সহজসাধ্য।

আরও পড়ুন:- বাড়িতে বসেই ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নের ফাইল দাখিল করার পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিন।

তিনি আরো জানিয়েছেন যে, চাঁদের নিজস্ব কোনো বায়ুমণ্ডল না থাকার কারণে রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এবং জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা চালানোর জন্য আদর্শ পরিবেশ পাওয়া সম্ভব। যার জেরে ইতিমধ্যেই চন্দ্রপৃষ্ঠে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ দিয়ে গবেষণা কার্যকর করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। যদিও গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ লুনার অবজারভেটরি ফর কসমোলজি -এর তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, আগামী দিনে চন্দ্রপৃষ্ঠ মহাকর্ষীয় তরঙ্গ নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা শুরু হতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে। তবে যত দ্রুত সম্ভব এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চালানোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, এমনটাই জানা গিয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রের রিপোর্ট অনুসারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চিন সহ ভারত এই বিষয়টি নিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে অভিযান চালাবে বলেই জানা গিয়েছে এই সমস্ত সূত্রের তরফে প্রকাশিত তথ্যে।

চাঁদকে সম্পূর্ণরূপে চেনার জন্য ১৯৬৯ সালে প্রথম মানুষ নিজের চেষ্টায় চাঁদে অবতরণ করে। আর তারপর থেকেই মহাকাশে অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন গ্রহে মানুষের বসবাসযোগ্য পরিবেশ আছে কিনা তা জানার জন্য এক নতুন রাস্তা খুলে গিয়েছিল। চন্দ্র অভিযানের ক্ষেত্রে বারবার বিভিন্ন রকম বাধা এলেও ভারত সহ অন্যান্য দেশ এই সমস্ত বাধাকে জয় করে বর্তমানে চাঁদের মাটিতে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা করতে উদ্যোগী হয়েছে। আগামী দিনে এ সংক্রান্ত গবেষণা সাফল্য পেলে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক নতুন পথ খুলে যাবে, এমনটাই দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে।